প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। গত বছরের ২৫ শে মে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ তম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। সেই হিসেবে এবছর ২৪শে মে পূর্ণ করেছেন তাঁর কর্ম মেয়াদের প্রথম বছর। এই এক বছরেই দায়িত্বের প্রতি নিষ্ঠতা, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও শিক্ষার্থী বান্ধব চিন্তাভাবনার কারণেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

করোনায় থমকে যাওয়া এক পৃথিবীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। দায়িত্বভার গ্রহন করেই অনলাইনে পরীক্ষা কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে স্থবির হয়ে যাওয়া শিক্ষা কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনেন আবার। করোনালে সুবিধা ভোগ না-করা খাতগুলোর ফি শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ উদ্যোগেই মওকুফ করে দেন। করোনার কারণে এবং উপাচার্য বিহীন ৪ মাস মিলিয়ে প্রায় দু’বছর যাবৎ স্থবির হয়ে যাওয়া শত কোটি টাকারও বেশি অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ সচল করাও ছিলো অন্যতম সমস্যা। তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়নে গত এক বছরের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। যেন এক বছরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

যেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে সমালোচনার তুঙ্গে, সেখানে ব্যতিক্রমী খুবি উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের এই অধ্যাপক উপাচার্যের দায়িত্ব পালন ছাড়াও নিয়মিত ছুটছেন শ্রেণিকক্ষে। কারিকুলামের নির্ধারিত ফিল্ড ভিজিট এর অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন সুন্দরবনের গহীন জঙ্গলে। আবার কখনই বা ব্যক্তিগত গবেষণার কাজে কক্সবাজারের চকরিয়ায়। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান এবং গবেষণার প্রতি নিষ্ঠতা প্রায় নজিরবিহীন।

পরপর দুইবার আন্তর্জাতিক ইনডেক্সে মর্যাদাপূর্ণ জায়গা করে নেয়া এ গবেষক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে গবেষণার প্রতি দিয়েছেন বিশেষ গুরুত্ব। মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা অনুদান প্রবর্তন এবং এ খাতে ইতোমধ্যে ১৭ জন গবেষককে ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকা আনুষ্ঠানিভাবে গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষকদের ৬২টি প্রকল্পে প্রায় দুই কোটি টাকা গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাব তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উদ্দেশ্য সাধনসহ অন্যান্য কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য একটি অত্যাধুনিক মানের ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করে কাজ আরও গতিশীল ও স্বচ্ছ করতে ই-নথি কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইউজিসির সহায়তায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আসন্ন অর্থবছরে এটি বাস্তবায়ন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সফট অবকাঠামো’ শীর্ষক ৪০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় সাপেক্ষ একটি ডিপিপি ইউজিসিতে জমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যাকবন স্থাপন, স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি করা, ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বিষয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হানাদার বাহিনীর টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহৃত টিনশেড ঘরটিকে ‘গল্লামারী বধ্যভূমি স্মৃতি জাদুঘর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে সংরক্ষণে মেরামত ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে এ কাজে ইউজিসি থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ লাখ টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়গুলোর মাঠ গবেষণাগার ও সুন্দরবন ইনস্টিটিউটের প্রয়োজন ছাড়াও আগামী একশত বছরের চাহিদা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিরিখে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন।

এসব উদ্যোগ ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় তার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে মর্যাপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টিতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন উপাচার্য।

দায়িত্বগ্রহণের একবছরপূর্তির প্রাক্কালে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কমকর্তা-কর্মচারী এবং রাজনীতিক, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সাংবাদিক, সামাজিক সংগঠনসহ অনন্য সকল মহলে সহযোগিতা কামনা করেছেন।